সূত্র উল্লেখপূর্বক এই ব্লগের যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় উদ্ধৃত করা যাবে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিতে হবে।

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

কুয়াশা ঢাকা দিন : পর্ব-৭

পর্ব-
সেই রাতেই রূপনগরে অনেকগুলো কাণ্ড ঘটে গেল। শিশিরদের সবার সামনে থেকে শিশিরের বাবাকে ডেকে নিয়ে গেলো একদল লোক। কিছুক্ষণ পর খালপাড়ের দিক থেকে একটা গুলির আওয়াজ ভেসে এলো। অরুণ বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো-সে তার বড় ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরও মর্মান্তিক। বাজারের পাশেই এক হিন্দুবাড়ি থেকে একুশ জনকে ধরে এনে, এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারলো পাকিস্তানি সেনারা। পুড়িয়ে দেওয়া হলো সে বাড়ির সবগুলো ঘর। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আরও অনেক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হলো।
এর পরের ঘটনাটি শুধু মর্মান্তিকই নয়, কল্পনা করারও অযোগ্য। শিশিরের বাবাকে মেরেই রাজাকারের দলটি যায় পণ্ডিত স্যারদের বাসায়। তাকে যখন খালপাড়ে এনে দাঁড় করানো হয় তখন তিনি তার পরিণতি আঁচ করতে পারেন। রাজাকার দলটির মধ্যে অনেককেই চিনতেন পণ্ডিত স্যার। সেই চেনামুখগুলোর মধ্যে তারই এক ছাত্র ফুয়াদকে দেখতে পেয়ে আনন্দে তার চোখ দুটো চকচক করে উঠেছিলো।
অ্যাই, তুই আমার ছাত্র ফুয়াদ না? চিত্কার করে বলেছিলেন স্যার।
কিন্তু ফুয়াদের হাতে তার দিকে তাক করা অস্ত্র দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই চুপসে গিয়েছিলেন তিনি। শেষে ঠাণ্ডা গলায় তিনি বলেছিলেন, আমাকে যখন মারবিই, আয় তুইই আমাকে গুলি কর। তবু সান্ত্বনা থাকবে এই যে, আমার প্রিয় এক ছাত্রের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে আমার।
ফুয়াদ ঠিকই গুলি করেছিলো। মৃত্যুর আগে স্যার একবার শুধু উচ্চারণ করেছিলেন, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।
এরপর রাতারাতি পাল্টে গেলো রূপনগরের পরিবেশ।
দুদিনেই এক ভুতুড়ে এলাকায় রূপ নিলো এলাকাটি। যাদের পালাবার মতো জায়গা আছে তারা সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে জীবন নিয়ে পালাতে থাকলো। আর যাদের সে সুযোগ নেই তারা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে অজানা বিপদের আশঙ্কায় সময় কাটাতে লাগলো। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়লো যেসব পরিবারে যুবক ছেলে আছে তারা। যুবক ছেলেদের ঘরে রাখা দায়, কারণ পাকিস্তানি সেনারা যুবক ছেলে পেলেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আবার তারা যদি বাড়িতে না থাকে তাহলে আরেক বিপদ। সে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে এই সন্দেহে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এই অবস্থায় রবিনের আব্বা ঠিক করলেন তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন।
হঠাত্ এই সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়লো রবিন। গত দিনে সে মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এখান থেকে সে পালিয়ে সুন্দরবন যাবে। শিশির তার সঙ্গী হবে সেটা আগেই ধারণা করেছিলো।
কিন্তু মাঝখানে রাজাকারদের হাতে শিশিরের বাবা খুন হওয়ায় ওর মানসিক অবস্থা কেমন তা এখন জানে না রবিন। রবিন সিদ্ধান্ত নেয়, আজ রাতেই শিশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে সে। শিশির যদি যেতে না চায় তাহলে একা একাই পালাবে। রাস্তাঘাটের ধারণা তো পণ্ডিত স্যারের ক্লাস থেকে পেয়েছেই।
মা-বাবা জানতে পারলে কিছুতেই যেতে দেবেন না। অতএব পালানোই হবে সহজ পথ। পালাতে হবে এবং সেটা আজ রাতেই। বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে গেলে ওর সমস্ত প্ল্যানই নষ্ট হয়ে যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন