সূত্র উল্লেখপূর্বক এই ব্লগের যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় উদ্ধৃত করা যাবে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিতে হবে।

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

কুয়াশা ঢাকা দিন : পর্ব-১০

পর্ব-১০
অরুণ বাবুকে মেরে তাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পর মা শিশিরকে নিয়ে বৈঠকখানা ঘরটিতে আশ্রয় নিলো। এখন আর কোনো ভয় নেই ইন্দুবালা দেবীর। স্বামীর মৃত্যু হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে। বড় ছেলে কোথায় কী অবস্থায় আছে জানেন না তিনি। শুনেছেন যুদ্ধের শুরু থেকেই নাকি সুন্দরবনের কাছাকাছি একটি এলাকায় যুদ্ধ করছে সে। বাবার অনুমতি নিয়েই যুদ্ধে গিয়েছিলো সুব্রত। সেই বাবার মৃত্যু সংবাদ পর্যন্ত সে শুনেছে কি না কে জানে! ইন্দুবালা চান সুব্রত জানুক তার বাবার মৃত্যু সংবাদ। তাহলে তার তেজ আরও বেড়ে যাবে। আর সুব্রতদের মতো ছেলেদের শক্তি-সাহস বেড়ে গেলে কেউ ওদের আটকে রাখতে পারবে না। জয়ী ওরা হবেই। হয় জয়ী হবে, নয় বীরের মতো যুদ্ধ করতে করতে জীবন দেবে। দেশের জন্য জীবন দেয়ার ভাগ্য কজনের হয়? শুয়ে শুয়ে এসব কথা ভাবছিলেন ইন্দুবালা। এমন সময় সেখানে ঢুকলো শিশির।
মাগো, তুমি অনন্ত মাসির ওখানে যাবে মা?
কেন?
জায়গাটা এখনও নিরাপদ আছে।
আমার নিরাপদ বা ভয়ের আর কী বাকি আছে বাবা?
ভয়ের কথা বলছি না মা।
আমি জানি তুই কী বলতে চাচ্ছিস। বল, নির্ভয়ে বল। ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন মা।
কিন্তু শিশির চুপ করে রইলো।
শোন বাবা, দেশের জন্য যুদ্ধ করার সৌভাগ্য অনেক মানুষেরই হয় না। তোদের সুযোগ এসেছে। দেশের জন্য বীরের মতো যুদ্ধ করে মরে যাওয়া অথবা দেশকে শত্রুমুক্ত করা দুটোই গৌরবের। কিন্তু আমি অন্য কিছু চিন্তা করছি।
কী চিন্তা করছো মা?
আমি চিন্তা করছি তোর বয়স নিয়ে। এই এতোটুকু ছেলে তুই, কীভাবে যুদ্ধ করবি? সেদিনও মুখে তুলে খাইয়ে না দিলে খেতে পারতিস না। জামাকাপড় পরিয়ে না দিলে পরতে পারতিস না। আর আজ তুই যুদ্ধে যাবি। সুব্রতটাও কোথায় কী অবস্থায় আছে জানি না। এদিকে তোদেরকে ছেড়ে একা একা কী করে থাকবো আমি ভগবানই জানেন।
এজন্যই তোমাকে বলছিলাম অনন্ত মাসির কাছে চলে যেতে।
না রে, যে ভিটায় বসে তোর বাবার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে আমার, যে ভিটা ছেড়ে তোর বাবা কিছুতেই যেতে চাইতেন না কোনোখানে-সে জায়গা ছেড়ে আমিও কোথাও যাবো না। আর আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না তোরা। তোরা ভালো থাকলে মনে করবি আমিও ভালো আছি।
তুমি শুধু আশীর্বাদ করো মা। তোমার মতো মায়েদের দোয়া থাকলে জয়ী আমরা হবোই।
ছেলের কথা শুনে নিষ্পলক তার দিকে চেয়ে রইলেন ইন্দুবালা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন