সূত্র উল্লেখপূর্বক এই ব্লগের যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় উদ্ধৃত করা যাবে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিতে হবে।

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

কুয়াশা ঢাকা দিন : পর্ব-৬

পর্ব-
রবিন তাড়াতাড়ি ফিরে এলো ঠিকই কিন্তু থানার ঘাটে কী হচ্ছে তা দেখার কৌতূহল থেকে নিজেকে ফেরাতে না পারায় ঘুরপথে বাসার রাস্তা না ধরে সোজা থানার দিকে হাঁটতে লাগলো। ঘাটের অনেকটা দূরে থেকেই সে বুঝতে পারলো সে যা শুনেছে তা মিথ্যা নয়। ঘাটে ছোট্ট ছোট্ট তিনটি লঞ্চ বাঁধা। কয়েকজন লোক লঞ্চ থেকে বড়ো বড়ো অনেকগুলো প্যাকেট নামাচ্ছে।
থানার সামনের মোড়টা ঘুরে ডানদিকে হাঁটতে যাবে রবিন, এমন সময় পেছন থেকে এক চিত্কার ভেসে এলো, ঠারো।
রবিন থমকে দাঁড়ালো কিন্তু আদেশটা কাকে করা হয়েছে ঠিকমতো বুঝতে পারলো না। পেছন ফিরে দেখলো একটা পাকিস্তানি মিলিটারি তার দিকে তাকিয়েই কমান্ডটা করেছে। মিলিটারিটা হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো রবিনকে।
এই মুহূর্তে রবিনের ভয় পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে রবিন একেবারে নির্ভয়ে আস্তে আস্তে পা ফেলে মিলিটারিটার দিকে হেঁটে গেলো। কাছে যেতেই সে জিজ্ঞেস করলো, নাম ক্যায়া হায় তুমহারা?
লোকটির মুখে উর্দু শুনে রবিনের মাথায় রক্ত চড়ে গেল। এই উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একদিন বাঙালিরা বুকের রক্ত দিয়েছিলো। আজ এই লোকটা উর্দুতে রবিনের সঙ্গে কথা বলছে!  মনে মনে জেদ চাপলো ওর, কিছুতেই উর্দু কথার জবাব দেবে না। লোকটি এবার আরও জোরে চিত্কার করে উঠলো, কিয়া নাম?
রবিন এবারও কোনো কথা বললো না। এমন সময় কাছাকাছি কোথাও থেকে কেদার চাচা ছুটে এলেন। সে আগে থেকেই অবশ্য জানতো যে কেদার চাচা রাজাকারের দলে নাম লিখিয়েছে। কেদার মিয়া ছুটে এসে বললো, হুজুর হয়তো আপনার উর্দু কথা বুঝতে পারছে না।
বহুত আচ্ছা, ম্যায় জো জাননা চাহাতে হু উসকো পুছো বাদমে হামকো বোলো, পহেলে পুছো উসকা নাম আওর ওয়ালিদ কা নাম কেয়া হ্যায়।
কেদার মিয়া রবিনকে কিছু জিজ্ঞেস না করে নিজে থেকেই তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলো, হুজুর হচ্ছে ফখরুদ্দীন খান সাহেবের ছেলে রবিন।
ক্যায়া, খান সাহাবকা লাড়কা? ঠিক হ্যায় উহ তো হামারা আপনা আদমি। উসকো বোলো লনস সে বান্ডিল উতারনে কে লিয়ে মদদ কারে।
রাজাকার লোকটি বাংলায় তার কথা রবিনকে বুঝিয়ে দিলো। কিন্তু এবারও রবিন নড়াচড়া করলো না, এমনকি কোনো কথা পর্যন্ত বললো না। পাকিস্তানিটি কয়েকবার ধমক দেওয়ার পরও রবিন যখন কোনো কথা না বলে গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তখন রাজাকার লোকটি বললো, হুজুর, ছোটো মানুষ, সারাদিন স্কুল করে বাড়ি ফিরছে। এখন হয়তো ওর ক্ষুধা লেগেছে, তাই কাজ করতে চাইছে না।
ঠিক হ্যায়। উসকো জানে দো।
রবিন মনে মনে বললো, শুয়োরের বাচ্চা, তোদের সাইজ করার জন্য শিগগিরই ফিরে আসছি। সে পর্যন্ত অপেক্ষা কর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন