সূত্র উল্লেখপূর্বক এই ব্লগের যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় উদ্ধৃত করা যাবে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিতে হবে।

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

কুয়াশা ঢাকা দিন : পর্ব-৩

পর্ব-
ওই রাতেই রূপনগর থানায় দুটো ঘটনা ঘটলো। সন্ধ্যারাতে স্থানীয় কিছু যুবক থানা আক্রমণ করলো। ব্যাপারটা ছিলো প্রচণ্ড দুঃসাহসী। থানায় তখন দশজন পুলিশ ছিলো। আর ছিলো দশটি রাইফেল। দশ-বারোজন যুবক থানার চারদিক ঘেরাও করে ফেললো। তাদের হাতে কোনো অস্ত্রশস্ত্র ছিলো না। যুবকরা থানা ঘেরাও করে সব পুলিশকে অস্ত্র ফেলে দিতে বললো। ছোট হ্যান্ডমাইকে দলনেতা ঘোষণা দিলো-থানার সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র যেনো থানার সামনের খালি জায়গাটিতে ছুঁড়ে ফেলা হয়। নইলে চারদিক থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হবে বলে চিত্কার করে জানালো সে। ভয় পেয়ে পুলিশের সবাই যার যার হাতের রাইফেল থানার সামনে ছুঁড়ে মারলো। তখন এক কিশোর দৌড়ে গিয়ে সেগুলো যুবকদের হাতে হাতে তুলে দিলো। সেই অস্ত্র দিয়েই থানার লোকজনকে ভয় দেখিয়ে চলে এলো তারা।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটলো শেষরাতের দিকে।
অস্ত্র লুট হওয়ার পর রূপনগর থানা পুলিশ অয়্যারলেসে সে খবর জানায় জেলা পুলিশকে। খবর পেয়ে আশপাশের তিনটি থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স এসে সম্ভাব্য সব জায়গায় সারারাত তল্লাশি চালায়। শেষরাতের দিকে একটি বাড়ি থেকে বারো জনকে আটক করা হয়। রাইফেলগুলোতে কোনো গুলি না থাকায় যুবকরা কোনো প্রতিরোধ করতে পারেনি। ধরা পড়া বারো জনের মধ্যে একজন হলো শিশির।
এর পরের ঘটনা আরও লোমহর্ষক।
শিশিরসহ বারো জনকে থানায় এনে একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখা হয়। সকাল হলে তাদের কী পরিণতি হবে সে কথা সবারই জানা ছিলো। তাই পালানোর পথ খুঁজতে থাকে সবাই।
তখনও সকাল হয়নি।
ভোরের আলো ফুটে উঠছিলো পুব আকাশ থেকে। পাশের কোনো বাড়ি থেকে ভেসে আসছিলো মোরগের ডাক। থানার পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো স্থানীয় জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন। ফজরের আজান দিতে হবে। এখনই। বলেশ্বরের শাখা নদীটি কুলু কুলু শব্দে বয়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের দিকে।
হঠাত্ ঝপাত্ ঝপাত্ শব্দে অস্থির হয়ে উঠলো সেই পানি। থানার প্রহরীরা যখন টের পেলো জানালা ভেঙে পালিয়েছে যুবকরা তখন অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। নাকি প্রহরীরা ইচ্ছে করেই ওদেরকে পালাবার সুযোগ দিয়েছিলো কে জানে? কারণ তারাও তো বাঙালি। অন্য এক বাঙালি মায়ের সন্তানের রক্তে লাল হবে বলেশ্বরের পানি তা হয়তো চায়নি থানার বাঙালি প্রহরীরা।
তারপরও পুরো থানা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো নদীর দিকে। রাইফেলের গুলির শব্দে কেঁপে উঠলো পুরো এলাকা। কিন্তু একজনকেও আটকে রাখা গেলো না।
থানার জানালা গলে প্রথম বাইরে বেরিয়েছিলো শিশির। ছোট বলে ওকেই সবাই আগে পালাবার সুযোগ দিতে চাইলো। কিন্তু বাইরে বেরিয়েও একা একা পালালো না শিশির। সবাই বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। তারপর সবাই মিলে একসাথে ঝঁপিয়ে পড়লো পানিতে।
পানিতে পড়ে সবাই ভাটির দিকে শরীর ছেড়ে দিলেও শিশির চলে গেল উজানে। উজানে যাওয়ার অবশ্য কারণও আছে। থানার ঘাট থেকে কিছুটা উজানে গেলেই খালের পাড়ে শিশিরদের বাসা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন