ও
প্রাণের কুলসুম গো, আমি
কি তোর বইন
ছিলাম না...
মঞ্চে
করিম বয়াতির কুলসুমের কেচ্ছা বেশ জমে
উঠেছে। বিবি ফাতেমার বোন বিবি কুলসুম বিশাল খাবারদাবারের আয়োজন করেছেন। হযরত আলীর দুই
ছেলে হাসান আর
হোসেন রাস্তায় বসে কাঁদছে। তাদের পেটে খাবার
নেই। তাদের খালা
এতবড় মেজবানের আয়োজন করেছেন আর ভাগ্নে দুটোকে দাওয়াত করবেন না
তা তো হতে
পারে না। শিশু
হাসান-হোসেন পেটভর্তি ক্ষুধা নিয়ে সেই
দাওয়াতের অপেক্ষায় আছে।
মজা
করে সুর দিয়ে
গেয়ে চলেছেন করিম বয়াতি। এদিকে খাবারের কথা উঠতেই
আনিসের পেটের ভেতরটা একটু মোচড় দিয়ে
ওঠে। কিন্তু তাকে পাত্তা না দিয়ে কুলসুমের কেচ্ছার দিকে মন
দিতে চায় সে।
এই
তো কিছুদিন আগেও এ-ধরনের বয়াতিগানের আসর পেলেই রাত
জেগে দেখত আনিস।
এমনকি রাস্তায় ওষুধ বিক্রি করার জন্য ক্যানভাসাররা যখন কাঁধে হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গান গেয়ে
গেয়ে লোক জড়ো
করত তখনও তন্ময়
হয়ে সে-গান
শুনত আনিস। আজকের পরিবেশ অবশ্য ভিন্ন। একটু আগেই
ও এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ফিরেছে। সেখানে সফট ড্রিংকস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে
তাকে। পুরো একগ্লাস সফট ড্রিংকস যখন তার
সামনে রাখল তার
এক কাজিন তখন
কিছুটা লোভ অবশ্য
আনিসের হয়েছিল। কিন্তু মুখে একচুমুক তুলতেই গলা থেকে
আর নামতে চাইল
না। সকাল থেকে
না-খাওয়া পেটে
সফট ড্রিংকস খুব কাজে
আসে না। তবুও
কাউকে কিছু না
বলে সে অর্ধেক গ্লাস খালি করেছিল।
অবশ্য
সেই মুহূর্তে খাবারের সমস্যাটা আনিসের কাছে কোনো
সমস্যা মনে হচ্ছিল না। তার কাছে
বড় সমস্যা মনে হচ্ছিল আজকের রাতটা কাটানো।
আজ
সকালেই সদরঘাটে এসে নেমেছে আনিস। লঞ্চ থেকে
নেমে সদরঘাটেই একটা হোটেলে নাশতা খাওয়ার জন্য যায়
সে। নাশতা খাওয়ার জন্য যায় বটে,
তবে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন। তার বয়ে
আনা ব্যাগটা নিয়ে এত
বড় ঢাকা শহরে
কী করে ঘুরবে
সে! নিজের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই,
তার ওপর এত
বড় ব্যাগ তার
কাছে বিরাট বোঝা
বলেই মনে হচ্ছিল।
ভারি
ব্যাগটা হোটেলের ম্যানেজারের পাশে রেখে
হাত-মুখ ধুয়ে
নাশতা খায় আনিস।
ইচ্ছে করেই নাশতাটা একটু বেশি খরচ
করে খায়। এর
পেছনেও অবশ্য অন্য
উদ্দেশ্য। খাওয়ার পরে একটা
সিগারেট বের করে
ধরাতে ধরাতে বিলটা
ক্যাশে দিয়ে ম্যানেজারকে বলে, আমার ব্যাগটা একটু রইল, একটু
পরেই নিচ্ছি। ম্যানেজার বিলের অঙ্ক
দেখে অথবা আনিসের সিগারেট ধরাবার ভঙ্গি দেখে
তাকে আর কিছু
বলে না।
হোটেল
থেকে বেরিয়ে হাঁফ ছেড়ে
বাঁচে আনিস। মনে
হয় বিশাল একটা
ঝামেলা মিটানো গেছে। এই
বিশাল ঢাকা শহরে
তার নিজেরই থাকার ঠাঁই
নেই। নিজের থাকার
একটা জায়গা জোগাড়
করতে পারবে কি না তার
ঠিক নেই, আর
এত বড় ব্যাগ
নিয়ে সে কোথায়
ঘুরবে! কীভাবে ঘুরবে!
ব্যাগের চিন্তা থেকে মুক্ত
হয়ে সারা দিন
এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায়
আনিস। সন্ধ্যার দিকে যায়
এক আত্মীয়ের বাসায়। উদ্দেশ্য রাতটা সেখানে কাটানো যায় কি
না। কিন্তু রাত যখন
১১টার মতোন বাজে
তখন বোঝা যায়
বাসার লোকজন কেমন
উসখুস করছে আনিস
উঠছে না বলে।
সেখান থেকে বিদায়
নিয়ে অনেকটা ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে থাকে সে।
এত রাতে আর
কোথায় যাওয়া যায়
রাত কাটানোর জন্য ভেবে
কোনো কূলকিনারা করতে পারে
না আনিস। হাঁটতে হাঁটতে একটা মাইকের শব্দ ভেসে আসে
তার কানে। আরেকটু সামনের দিকে এগুতেই দেখে বিশাল এক
জটলা। স্টেজে গান গাইছেন এক বয়াতি। সামনে কয়েকশ’
দর্শক। হাঁফ ছেড়ে
বাঁচে আনিস। গান
শোনার ইচ্ছে থাক
বা না থাক,
রাতটা তো কাটানো যাবে! দর্শকদের মাঝখানে গুটিসুটি মেরে বসে
পড়ে আনিসও। বয়াতির গান এগিয়ে
যায়। কিন্তু না, আবারও
সেই খাওয়াদাওয়ার বিষয়। ক্ষুধায় তড়পাচ্ছে ছোট্ট হাসান-হোসেন। কিন্তু খালা লোক
পাঠাচ্ছেন না তাদেরকে নিতে।
আনিস
সকালে সদরঘাটে যে নাশতা
করেছিল তারপর সারা
দিনে পেট ভরার
মতো আর কিছু
খায়নি। তার পকেটে
যদিও এখনও কিছু
টাকা আছে কিন্তু তিনবেলা হোটেলে খেলে দু’দিনেই তা
শেষ হয়ে যাবে
বলে বিশ্বাস আনিসের। তাই কোনোমতো একটা কাজ যোগাড়
করা পর্যন্ত এটা দিয়েই
তাকে চলতে হবে।
ওদিকে বাড়িতে বৃদ্ধ মাকে
বলে এসেছে ঢাকা
গিয়েই টাকা পাঠাবে। কোনোমতো যেন কয়েকটা দিন চালিয়ে নেয়। ঢাকায়
আনিসের বড় ভাই,
বোন, চাচা, মামা
কোনো কিছুরই অভাব নেই।
কিন্তু আনিস কারও
কাছে যায়নি। কারও কাছে
যাবে না বলেই
ঠিক করেছে সে।
অনেক দিন ধরেই
আনিসদের সংসারের অবস্থা খারাপ। বাবা আরেকটি বিয়ে করে আলাদা
সংসার পেতেছেন। আনিসের বড় বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে
অনেক আগেই। বড়
দুই ভাইও ঢাকায়
কিছু একটা করে
চলছেন। বাড়িতে আনিস আর
তার মা।
আনিস
যখন ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ে
তখনই এক বিধবা
মহিলাকে বিয়ে করে
সংসার পাতেন তার
বাবা। এতে তার
সংসারের কারওই তেমন
কিছু আসে-যায়
না, কিন্তু বিপদে পড়ে
ছোট্ট আনিস আর
তার মা। প্রথম
প্রথম বাবা মাঝে
মাঝে টুকটাক সংসার-খরচ
দিলেও শেষে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে তিনি
আর ওদের সংসারের দিকে ফিরেও তাকান
না। মফস্বল শহরে ছোট্ট
তিন রুমের টিনশেডের বাসাটার এক রুম
ভাড়া দিয়ে কোনোমতো তাদের দিনে একবেলা-আধবেলা খাবারের যোগাড় হয়।
ওদিকে আনিসের এসএসসি পরীক্ষা সামনে এগিয়ে
আসে। সময়মতো খাবার নেই,
স্কুলের বেতন নেই,
বইখাতা নেই। তার
মধ্যেও এগিয়ে চলে
তার পড়াশোনা। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় সে একেবারেই হতাশ হয়ে পড়ে।
কোনোমতেই ফরম ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে
পারে না। মফস্বল স্কুলে খুব বেশি
যে খরচ তাও
নয়। মাত্র তো
সাড়ে তিনশ’ টাকা।
কিন্তু তারও যোগাড়
হয় না কোনোভাবেই। শেষমেশ উপায়ান্তর না পেয়ে
আনিসের মা যান
তার এক আত্মীয়ের কাছে। এই প্রথম
কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেন
তিনি। সেই আত্মীয় সত্যি সত্যি আনিসের ফরম ফিলাপের টাকার ব্যবস্থা করেন। সেই টাকায়
ফরম ফিলাপ করে
পরীক্ষা দেয় আনিস।
খুব যে ভালো
ছাত্র আনিস ছিল
কোনো সময় তা
নয়। তবে পরীক্ষা দিয়ে সে মোটামুটি নিশ্চিত যে ফল
খুব একটা খারাপ
হবে না। পরীক্ষা দিয়ে সে আর
দেরি করে না।
পরদিন সকালেই ঢাকার উদ্দেশে ব্যাগ নিয়ে রওনা
হয়।
রাত
যখন তিনটার মতো বাজে,
মঞ্চে বয়াতির শরীরে তখন
হয়তো ক্লান্তি ভর করে।
এবং আনিসকে চমকে দিয়ে
গানের আসর শেষ
হয়ে যায়। আবার
আতঙ্কিত হয়ে ওঠে
আনিস। পিছনের দিকে চেয়ে
দেখে রাস্তায় তখন বিদ্যুতের লাইটপোস্ট ছাড়া আর
কিছুই নেই।
অনুষ্ঠান শেষ হতেই দর্শকরা সব যার যার
গন্তব্যে হাঁটা শুরু
করে। আনিস উঠে
দাঁড়ায়। কিন্তু কোথায় যাবে
সে!
আবার
শুরু হয় হাঁটা। গতরাতে লঞ্চে নির্ঘুম রাত কাটানো আর সারাদিনের ঘোরাঘুরির কারণে আনিসও
ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তার ইচ্ছে করছে
এই মুহূর্তে কোথাও শুয়ে
পড়ে সটান ঘুম
দিতে। কিন্তু কোথায় শোবে?
এমন
সময় রাস্তার পাশে সার
করে রাখা অনেকগুলো ঠেলাগাড়ির দিকে চোখ
পড়ে তার। ঠেলাগাড়িগুলো এমনভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে
যে তার সামনের দিকটা মাটির সঙ্গে
মিশে রয়েছে, আর
অন্যদিকটা ওপরের দিকে।
আনিস একটা আশার
আলো দেখতে পায়।
কাছাকাছি কোনো লোকজন নেই।
আনিস একটা পরিষ্কার দেখে ঠেলাগাড়ির ওপর শুয়ে
পড়ার চিন্তা করে। রাস্তার পাশে মশার সমস্যা থাকা স্বাভাবিক। তবে এ
মুহূর্তে সেটা কোনো
বিষয় নয় তার
কাছে। সে নিজের
স্যান্ডেল জোড়াকে মাথার নিচে
বালিশের মতো করে
দিয়ে গায়ের চাদরটা দিয়ে মাথা ঢেকে
শুয়ে পড়ে। পিঠের
নিচে শক্ত বাঁশের বিছানা। এমন বিছানায় কোনোদিন শুতে হয়নি
আনিসকে। তবু এই
মুহূর্তে তার কাছে
এটা মখমলের বিছানা বলেই মনে
হচ্ছে।
চাদরের ভেতর থেকে মুখ
বের করে চারদিকটা আরেকবার দেখল সে।
না, কাছাকাছি উপদ্রব বলতে কিছু
নেই। রাস্তার ওপারে কয়েকটা কুকুর মনে হয়
ঘুমুচ্ছে। গানের আসরের
লোকজন চলে যাওয়ার পরে রাস্তায় আর কোনো
লোক নেই। চারদিকে সুমসাম নীরবতা। তারই মাঝে
দূরে কীটপতঙ্গের সম্মিলিত ডাকে অস্পষ্ট একটা ঝুমঝুম আওয়াজ বেজে
চলেছে অনবরত।
বাঁ
হাত দিয়ে নিজের
প্যান্টের বাঁ পকেটটা আরেকবার পরখ করে
নেয় আনিস। না,
সবকিছু ঠিকঠাক আছে। পকেটে
যে টাকা আছে
তাতে আরও কয়েকটা দিন চলে যাবে।
এর মধ্যে এত
বড় ঢাকা শহরে
একটা কাজ পাবে
না আনিস? নিশ্চয় পাবে। এত তাড়াতাড়ি অতটা হতাশ হতে
রাজি নয় সে।
চোখ
বুজতেই মায়ের মুখটা
চোখের সামনে ভেসে
ওঠে আনিসের। আট ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বলে
আনিস এমনিতে মায়ের একটু
ন্যাওটা। মাকে ছেড়ে
তার কোনোদিন দূরে থাকতে
হবে-এটা আনিস
যেমন ভাবেনি, তার মাও
নয়। আসার সময়
মা কিছুতেই আসতে দিতে
চাননি আনিসকে। বারবার বলেছেন, বাবা আনিস,
তুই আমার শেষ
সম্বল। তোকেও আমি
হারাতে চাই না।
কষ্ট হোক আমাদের, কিন্তু তোর ঢাকায়
যাওয়ার দরকার নেই।
কিন্তু আনিস শোনেনি তার কথা। মায়ের
কাছে থাকলে কষ্টেসৃষ্টে খেয়ে-না খেয়ে
বাঁচতে সে ঠিকই
পারবে, কিন্তু তাকে যে
অনেক বড় হতে
হবে। লেখাপড়া করে মানুষ
হতে হবে। তারপর
মায়ের দুঃখ ঘোচাতে হবে। শুয়ে শুয়ে
এসব আবোল-তাবোল
ভাবতে ভাবতে একসময়
ঠিকই ঘুমিয়ে পড়ে আনিস।
কতক্ষণ গেছে ঠাহর করতে
পারে না সে।
হঠাত্ করেই টের
পায় মাথার দিক
থেকে তার চাদর
ধরে কে যেন
টানছে। আঁতকে উঠে
চোখ মেলে চায়
আনিস। দু’জন
পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে তার
মাথার কাছে। ভূত
দেখার মতো আঁতকে
ওঠে আনিস। হুড়মুড় করে উঠে বসে
সে।
এই
ব্যাটা, কী করছিস
এখানে? এক পুলিশ
জিজ্ঞেস করে।
আনিস
কী বলবে বুঝতে
পারে না। কারণ
সে যে ঘুমাচ্ছিল সেটা তো পুলিশদের না দেখার কথা
নয়। তারপরও মিনমিন করে বলে
সে, ঘুমাচ্ছিলাম।
ঘুমুচ্ছিলি? এত রাতে এই
ঠেলাগাড়ির ওপর ঘুমুচ্ছিলি? নিশ্চয় কোনো বদ
মতলব আছে ব্যাটার। এই ব্যাটা, এখানে ঘুমাচ্ছিলি কেন? বাসা নেই?
না
নেই। আজই ঢাকায়
এসেছি তো! থাকার
কোনো জায়গা নেই।
বাড়ি
কোথায়?
বরিশালে।
ঢাকায়
কেউ নেই?
না।
তা,
কাজটাজ কী করবি
বলে ঠিক করেছিস?
জানি
না। যা পাই
তাই করব। তবে
মাস তিনেক পরে
আমার এসএসসির রেজাল্ট বের হবে।
নিশ্চয় ভালো ফল
করব আমি। তখন
কোনো কলেজে ভর্তি
হব। কাজ করব
আর লেখাপড়া করব।
বাড়ি
থেকে কবে আসা
হয়েছে?
কাল
সকালে।
টাকা-পয়সা কিছু
আছে?
আনিস
কিছুটা আমতা আমতা
করে। তার পকেটে
এখনও হাজারখানেক টাকা আছে।
সেটা কোনোভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলে
তার আর চলার
কোনো ব্যবস্থা নেই। মনে
মনে ভাবে সে,
পুলিশই তো। বিপদের সময় এরাই তো
সাহায্য করবে। এদের
কাছে সবকিছু খুলে বললেও
কোনো ক্ষতি নেই।
আর কী-ই
বা হবে! সে
তো আর কোনো
অন্যায় করেনি।
এক
হাজার টাকার মতো
আছে। এটা খরচ
হয়ে যাওয়ার আগেই একটা
কাজ যোগাড় করতে
হবে আমাকে।
কাজ
যোগাড় করতে হবে?
তোর মতো বদমাইশের কাজের দরকার নেই।
আমাদের সাথে চল।
বসে বসে শুধু
শ্বশুরবাড়ির খাবার খাবি।
কোনো কাজ করতে
হবে না।
এ
কথা বলে আনিসের পকেটে হাত দিয়ে
টাকাগুলো হাতে তুলে
নেয় একটা পুলিশ। এরপর অন্য পুলিশকে কিছু একটা ইশারা
করে সে। আনিসের কাছ থেকে একটু
দূরে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কী যেন আলাপ
করে তারা। তারপর
ফিরে আসে দু’জন। তখন
তাদের অন্য চেহারা।
ফিরে
এসেই তারা খুব
তত্পর হয়ে ওঠে।
আসামি ধরার মতো
দুই পুলিশ আনিসের দু’হাত ধরে
ফেলে।
ভালো
মানুষ সাজা হচ্ছে,
না? চল ব্যাটা থানায়। সব টের
পাবি।
অগত্যা কী আর করা।
পুলিশ যা বলে
তাই করতে থাকে
আনিস।
পরদিন
এক ছিনতাই মামলার আসামি হিসেবে কোর্টে হাজির করা
হয় আনিসকে। তার বিরুদ্ধে আনা প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। বিচারে তিন মাসের জেল
হয় তার।
তিন
মাস পরে কোনো
এক সকালে জেল
থেকে মুক্তি পায় আনিস।
জেলগেটে এসে এক
মুহূর্ত দাঁড়ায় সে। জেলখানার সামনে দিয়ে তিনটি
রাস্তা চলে গেছে
তিন দিকে। কোন
পথ কোন দিকে
গেছে কিছুই জানে
না আনিস। তবু
বাঁ দিকের পথ
ধরে হাঁটতে থাকে সে।
আজ একটা কাজ
জোগাড় করতেই হবে।
তিন মাস আগের
সদরঘাটের সেই দিনটির সঙ্গে আজকের দিনের
তফাত শুধু এই,
সেদিন আনিসের পকেটে হাজারখানেক টাকা ছিল। আজ
পুরোপুরি নিঃস্ব সে। তবু
আশা ছাড়ে না
আনিস। হাঁটতেই থাকে সামনের দিকে।
[প্রিয় পাঠক, আনিসকে নিয়ে আপনারা উদ্বিগ্ন হবেন না।
এ-রকম শত
শত আনিসকে প্রতিদিন বুকে টেনে
নিচ্ছে আমাদের এই রাজধানী শহর। নতুন আগন্তুক আনিসেরও একটা ব্যবস্থা নিশ্চয় হয়ে যাবে।
রিকশা বা ঠেলাগাড়ি চালানোর কাজ, বাসের
হেলপারি বা কন্ডাকটরি, কুলি-মজুর বা
মিনতির কাজ, অথবা
ছিনতাই-পকেটমারি, একটা না
একটা ব্যবস্থা তার অবশ্যই হয়ে যাবে। একদিন
এই ঢাকা শহরেই
তার যে গাড়ি-বাড়ি হবে
না, এ কথাও
আমরা জোর দিয়ে
বলতে পারি না।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন