সূত্র উল্লেখপূর্বক এই ব্লগের যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় উদ্ধৃত করা যাবে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিতে হবে।

শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১২

পরির নাম নিকিতা


নিকিতা!
পরির নাম নিকিতা!
শুনে তো হাসতে হাসতে দম বন্ধ হওয়ার যোগাড় তিতলির।
হা হা হা হা। হি হি হি হি। হো হো হো হো। হাসি যেন আর থামতেই চায় না।
দেখে বেশ রেগেই গেল ফুলপরি। কড়া সুরে সে বলল, কেন বাবা, পরি বলে আমরা কি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি না!
অনেক কষ্টে হাসিটা থামাল তিতলি। সে বেশ বুঝতে পারছে, পরিদের নাম নিয়ে এরকম হাসাহাসিতে ফুলপরি বেশ রেগে গেছে। তাই হাসি থামিয়ে সে বলল, রাগ করো না পরিবন্ধু। আসলে এতদিন আমরা জানতাম ফুলপরি, লালপরি, বানেছাপরিএগুলোই পরিদের নাম। কিন্তু আজ যখন এরকম অদ্ভুত একটা নাম শুনলাম তোমার মুখে, তখন না হেসে আর পারলাম না।
নিজের রাগটা একটু সামলে নিয়ে ফুলপরি বলল, আসলে তোমরা তোমাদের দাদি-নানিদের মুখে যেসব রূপকথার গল্প শোনো সেগুলো তো সেই কোন আমলের। আর সেসব গল্পে যেসব পরির কথা থাকে তারাও তো সেই কতকাল আগের। তখনকার দিনে তোমাদের, মানে মানুষদের নাম ছিল কেমন জানো না! ফুলবানু, লালবানু, সোনাবানুএসব নাম তখন রাখা হত মানুষের। আর তখন পরিদের নামও রাখা হত তোমাদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে। যেমন ফুলবানু নামের সঙ্গে মিলিয়ে ফুলপরি, লালবানু নামের সঙ্গে মিলিয়ে লালপরি রকম। আর এখন তোমরা যেরকম আধুনিক সব নাম রাখছ, আমরাও সেরকম রাখছি আর কি।
ফুলপরির কথা শুনে এবার একটু আশ্চর্য হল তিতলি। বলো কী! ফুলবানু, লালবানু, সোনাবানু রকম নামও হয় মানুষের!
হয় না, হত। মানে এখন আর এরকম নাম রাখে না মানুষ, তবে আগের দিনে রাখত।
তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই। তুমি কি মনে করেছ আমি মিথ্যে কথা বলছি?
না না, তা মনে করব কেন! তুমি কি মানুষ নাকি যে মিথ্যে বলবে! আমি তো শুনেছি যে মানুষরাই শুধু মিথ্যে কথা বলে।
তা তুমি ঠিকই শুনেছ তিতলি বন্ধু। তবে একটা ব্যাপার মনে হয় তুমি খেয়াল করোনি। বলল লালপরি।
কোন ব্যাপারটা খেয়াল করিনি বলো তো! জিজ্ঞেস করল তিতলি।
খেয়াল করোনি যে এত এত প্রাণীর মধ্যে শুধু মানুষই কিন্তু কথা বলতে পারে। আর অন্যসব প্রাণী যেহেতু কথাই বলতে পারে না, তার আবার সত্য আর মিথ্যা কী!
কেন, এই যে তুমি কথা বলছ আমার সঙ্গে! তুমি তো আর মানুষ নও। তাহলে তুমি কথা বলছ কী করে!
হ্যাঁ তা বলছি। তবে সে তো শুধু গল্পের মধ্যে। বাস্তবে কেউ কি কোনোদিন আমার বা আমাদের কথা শুনেছে? নাকি কোনোদিন দেখেছে কেউ আমাদেরকে?
এবার প্রসঙ্গ একটু পাল্টাল তিতলি। আচ্ছা পরিবন্ধু, তোমার দুষ্টু এই মেয়েটার জন্য নিকিতা নামটা তুমি পেলে কোথায়?
হ্যাঁ, সে কথা তুমি জানতে চাইতেই পারো। ওর জন্মের কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম জাপানে। দেখলাম সেখানকার ছেলেমেয়েদের নাম জুনিচিরো, নাকাতারা, নিকিতাএইসব। তো নিকিতা নামটা শুনেই আমার খুব ভালো লেগে গেল। তাইতো ওর নাম রাখলাম নিকিতা।
তিতলির শোয়ার রুমটার দক্ষিণে একটা জানালা। সেই জানালার ওপারেই বড় একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছটা তিতলির খুবই প্রিয়। গরমের দিনে ফুলে ফুলে লাল হয়ে থাকে কৃষ্ণচূড়া গাছটা। তিতলির শোয়ার ঘরের জানালা দিয়ে গাছটাকে দেখতে এত সুন্দর লাগে যে সেদিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না। আর সারা বছর গাছটায় এত এত পাখি এসে লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি করে যে সময় পেলেই তিতলি সেদিকে তাকিয়ে থাকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিতলি ভাবে, কী সুন্দর পাখিদের জীবন! আর পরিদেরও। পাখিরা যেমন ইচ্ছে হলেই আকাশে তাদের ডানা মেলে দিয়ে উড়তে থাকে, তেমনি পরিরাও যখন যেখানে খুশি ডানা মেলে উড়ে উড়ে বেড়ায়। আর কী সুন্দর দেখতে পরিরা!
এসব ভাবতে ভাবতে তিতলির ইচ্ছে হয়, সেও যদি পরি হতে পারত!
দিন আগের কথা। তিতলি তার ঘরে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিল। ভাবতে ভাবতে হয়তো বা তার একটু ঘুমই পেয়ে গিয়েছিল। এমন সময় ঘটল ঘটনাটা।
কোথা থেকে দুটি পরি এসে তার সাথে গল্প জুড়ে দিল। তাদের একজনের নাম ফুলপরি আর একজনের নাম লালপরি। তারা পরিদের দেশে তিতলিকে নিয়ে যেতে চাইল। লালপরি বলল, তিতলি বন্ধু, তোমাকে আমাদের খুবই পছন্দ। চলো আমাদের দেশে বেড়াতে নিয়ে যাই তোমাকে।
আচ্ছা পরি বন্ধু, যে কেউ যখন খুশি চাইলেই কি তোমাদের দেশে যেতে পারে? জানতে চাইল তিতলি।
এবার কথা বলল লালপরি। আমাদের দেশে যেতে হলে রানীর অনুমতি লাগে। দুই ধরনের মানুষকে পরিদের দেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। যারা মিথ্যে কথা বলে আর যারা অন্য মানুষকে কষ্ট দেয়। এরা যে শুধু আমাদের দেশে যেতে পারে না তাই নয়, এরকম লোকদের কাছে আমরা, মানে পরিরা, কখনও আসিই না, দেখাও দিই না।
তো, তিতলির জন্য রানীর অনুমতি যোগাড় করা হল। আজ ওরা তিতলিকে নিয়ে যাবে পরিদের দেশে। তিতলিকে নিয়ে যেতে এসেছে লালপরি আর ফুলপরি। তাদের সঙ্গে এসেছে ছোট্ট ফুটফুটে সুন্দর এক পরি। নাম তার নিকিতা। সেই নিকিতাকে নিয়েই এতক্ষণ এতসব কথা ওদের মধ্যে। যে ছোট্ট নিকিতাকে নিয়ে এতসব কথা সে এতক্ষণ বসে ছিল চুপচাপ। পরিদের দেশে যাওয়ার কথা উঠতেই সে একটু নড়েচড়ে বসল। বলল সে, তিতলি আপুকে যখন আমাদের দেশে নিয়েই যাবে তখন আর সময় নষ্ট কেন? তাড়াতাড়ি চলো।
হ্যাঁ চলো। কিন্তু কী করে যাব তোমাদের দেশে? সেখানে তো উড়ে উড়ে যেতে হয়। আমার তো ডানাই নেই, তাহলে আমি কী করে যাব তোমাদের সঙ্গে? বলল তিতলি।
সে তোমাকে ভাবতে হবে না। এক কাজ করো। আমার পিঠে চড়ে বসো তুমি। আর শক্ত করে ধরে রাখো আমাকে। সেই সঙ্গে চোখ রাখবে বন্ধ করে। ফুলপরি বলল।
ফুলপরির কথামতো তার পিঠে চড়ে বসল তিতলি শক্ত হয়ে। তারপর চোখ বন্ধ করল সে।
ফুলপরি চলতে লাগল উড়ে উড়ে। তার পাশে পাশে চলছে লালপরি আর নিকিতা।
উড়ে চলতে চলতে প্রচণ্ড রকম বাতাস গায়ে লাগছিল তিতলির। লাগুক। উড়ে চললে গায়ে তো বাতাস লাগবেই।
কিন্তু কী! হঠাত্ মনে হল দুয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানিও পড়তে লাগল তার গায়ে। বাতাস আর বৃষ্টির তোড়ে চোখ বন্ধ রাখার কথা ভুলে গেল তিতলি। চোখ মেলে চাইল সে।
চোখ মেলে তো অবাক তিতলি। কোথায় তার পরি বন্ধুরা আর কোথায় উড়ে উড়ে পরিদের দেশে বেড়াতে যাওয়া! তিতলি শুয়ে আছে তার খাটে। সামনের জানালা দিয়ে প্রচণ্ড রকমের বাতাস এসে ঢুকছে। বাতাসের প্রবল ঝাপটার সঙ্গে সঙ্গে দুয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানিও এসে লাগছে তার গায়ে। তাড়াতাড়ি উঠে বসল সে। স্বপ্নে দেখা পরিদের উদ্দেশে বলল, আবার দেখা হবে, সে পর্যন্ত ভালো থেকো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন