সূত্র উল্লেখপূর্বক এই ব্লগের যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় উদ্ধৃত করা যাবে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিতে হবে।

সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

বালতি-ভূত


ছোট্ট রিমি হঠাত্ করেই চিত্কার করে উঠলো-মা, বাবা, ভাইয়া, দেখে যাও! ভূত! ভূত!
গোসলখানায় একা একা গোসল করছিলো রিমি। তার চিত্কারে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলো সবাই। মা এসেই কোলে তুলে নিলেন রিমিকে। না, ভয় তেমন একটা পায়নি রিমি। তাহলে এতো জোরে জোরে চিত্কার করে উঠলো যে!
রিমির ভাইয়া রিমনও ছুটে এলো মা-বাবার পেছন পেছন।
বাবা বললেন, কই, কোথায় ভূত!
বালতিটার দিকে ইশারা করলো রিমি। ওই যে, ওই দেখো ভূত পানি খাচ্ছে।
তার কথায় সবাই বালতির দিকে ফিরে তাকালো। বালতিটা তখনও প্রায় কানায় কানায় ভর্তি। এতোটাই ভর্তি যে পানির টেপের নলটা ডুবে রয়েছে বালতির মধ্যে। সবাই সেদিকে ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখতে পেলো বালতির পানি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। সেটা দেখেই ছোট্ট রিমি মনে করেছে, নিশ্চয় ভূত খেয়ে ফেলছে পানি।
ব্যাপারটা খেয়াল করে রিমনও ভাবলো, তাইতো, নতুন বালতি, তাতে ফুটো থাকার কথাই নেই। তাহলে পানি কমে যাচ্ছে কেন?
সবকিছু শুনে বাবা বললেন, , এই কথা!
ব্যাপারটাকে তিনি মোটেই গুরুত্ব দিলেন না দেখে রিমনও কিছুটা অবাক হলো। সে বললো, কী ব্যাপার আব্বু, বাড়িতে এমন একটা ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটছে আর তুমি কোনো গুরুত্বই দিচ্ছো না!
বাবা বললেন, এসো তাহলে, ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিই তোমাদেরকে।
এই বলে তিনি দুটো বালতি নিয়ে এলেন। এনে একটি বালতি কানায় কানায় পানিভর্তি করলেন। অন্যটির অর্ধেক খালি রাখলেন। তারপর ছোট্ট একটুকরো পাইপ এনে তার দুটো মাথা দুই বালতির পানির মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন।
বাবার কাজের দিকে খেয়াল করতে করতে আবারও চেঁচিয়ে উঠলো রিমি-ভূত! বাবা ভূত! দেখো বেশিপানির বালতির পানি আবারও খেয়ে নিচ্ছে ভূত। আজ নিশ্চয় ভূতটার খুব তেষ্টা পেয়েছে। তাই যেখানে যতো পানি পাচ্ছে, সব খেয়ে নিচ্ছে।
বাবা বললেন, না, দেখো, ভরা বালতির পানি পাইপের মধ্য দিয়ে খালি বালতিতে গিয়ে জমা হচ্ছে।
তাইতো! তাজ্জব বনে গেলো রিমি। সেই সঙ্গে রিমনও।
বাবা বললেন, আসলে পানির ধর্মই হচ্ছে নিচের দিকে বয়ে চলা। চলার কোনো মাধ্যম পেলেই পানি নিচের দিকে চলতে থাকে। এখানেও সেই কাণ্ডটিই ঘটেছে। ভরা বালতির পানি পাইপ দিয়ে খালি বালতিতে চলে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর দুই বালতির পানিই সমান সমান হয়ে গেলো। তখন পাইপের মধ্য দিয়ে পানি যাওয়াও বন্ধ হলো।
বাবা আবার বললেন, রিমি যখন গোসল করছিলো তখন ছাদের ওপরের ট্যাংকের পানি শেষ হয়ে যায়। ওদিকে তখনই তোমাদের মা রান্নাঘরের কলের মুখটি খোলেন। আমাদের রান্নাঘরের কলের মুখ অনেক নিচুতে। তাই উপরের ট্যাংক থেকে যখন পানি আসছিলো না তখন এই বালতির পানি পাইপের মধ্য দিয়ে রান্নাঘরের কলে চলে যায়।
বাবার কথা শুনে রিমন এবং রিমি দুজনেই বুঝতে পারে ব্যাপারটা।
তখন বাবা বললেন, আর তুমি যে ভূত ভূত বলে চিত্কার করছিলে, ভূত বলতে কি কিছু আছে পৃথিবীতে?
রিমন বললো, তাহলে গল্পে যে আমরা কতো ভূতের কথা শুনি!
হ্যাঁ, ভূতের গল্প শুনতে সব শিশুরই ভালো লাগে। তোমাদেরও লাগে। এজন্যই বড়োরা অদ্ভুত সব ভূতের গল্প বানায় তোমাদের মতো শিশুদের জন্য। সেইসব গল্প শুনে শুনে মানুষের মনেও আস্তে আস্তে ভূতের ভয়টা চলে আসে।
একটু থেমে বাবা আবার বললেন, আসলে পৃথিবীর সব বস্তুরই নিজস্ব কোনো না কোনো ধর্ম আছে। যেমন, চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে, মানে কাছে টেনে নেয়। এছাড়া চুম্বকদণ্ড সব সময় উত্তর-দক্ষিণে মুখ করে থাকার চেষ্টা করে। বায়ুকে দেখা না গেলেও সে পরিবেশের অনেকখানি স্থান দখল করে আছে। আলো কঠিন কোনো বস্তুর ভিতর দিয়ে চলতে পারে না। আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠ সবকিছুকেই নিজের দিকে আকর্ষণ করে, যাকে আমরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বলি। বস্তুর এসব ধর্মের কিছুটা আমরা জানি, আবার অনেক কিছুই জানি না। বিভিন্ন অবস্থার কারণে আমাদের পরিবেশের অদ্ভুত সব আচরণ আমরা দেখতে পাই। সেসব আচরণের কারণ যখন আমরা বুঝতে পারি না তখনই আমরা সেগুলোকে ভূতের কাণ্ডকারখানা বলে মনে করি।
রিমন বললো, সত্যিই তাই বাবা। সেদিন সন্ধ্যার পর রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে সুমনটা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। ভূত ভূত বলে চিত্কার করে করে তার তো অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। তখন সবাই গিয়ে দেখতে পেলো, সুমন যেটাকে ভূত বলে ভয় পাচ্ছে সেটা আসলে একটা গাছ। গাছটার একটা ডাল বাতাসে এমনভাবে দুলছিলো যে সুমন মনে করেছিলো একটা ভূত তাকে হাত নেড়ে ডাকছে।
বাবা বললেন, হ্যাঁ তাই। আমরা যখন কোনো আশ্চর্য কিছু দেখি তখন ভয় না পেয়ে সেটার দিকে ভালোভাবে খেয়াল করা উচিত। তাহলেই আসল ব্যাপারটা ধরা পড়ে। যেমন ধরো, সুমন যদি সেদিন গাছটার বাতাসে নড়াচড়া দেখে ভয় না পেয়ে কাছে গিয়ে জিনিসটা কী দেখার চেষ্টা করতো তাহলে আর সে ভয় পেয়ে চিত্কার করতো না।
রিমন বললো, আমি আর কখনও ভূতের ভয় পাবো না।
রিমি বললো, আমিও না।

২টি মন্তব্য:

  1. যাদব সূত্রধর২৯ মে, ২০১২ এ ১১:৫৩ PM

    আমাকে দেয়া আপনার গল্প পড়েই বুঝতে পেরেছিলাম, আপনি কেমন উঁচু মাপের লেখক। এখন এটাও পড়লাম।
    আপনি লিখতে থাকুন। আপনার প্রতি শুভকামনা রইলো।

    উত্তরমুছুন
  2. উঁচুমানের লেখক বলে লজ্জা দিলেন। আমি আসলে কোনো লেখক নই, লেখার চেষ্টা করি মাত্র। আমার ব্লগে আসা এবং মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন যাদব সূত্রধর।

    উত্তরমুছুন